উসমানী সাম্রাজ্যের উত্থানঃ সিজন ১,এপিসোড ৪-৬ বাংলা সাবটাইটেল

সুলতান সম্রাটের কাছে দূত পাঠান যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তির জন্য। শহরের অধিবাসীদের সুলতান আত্মসমর্পণের বিনিময়ে অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে নিরাপত্তা ও সম্পত্তি লাভের কথা শোনান। শহরবাসীরা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর এপ্রিল মাসের ছয় তারিখে শুরু হয় বোমাবর্ষণ। এক সপ্তাহ পর এর প্রচণ্ডতা বেড়ে যায়, চলে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত শহরের দেয়াল ফুটো করার ক্ষেত্রে সুলতান মানব শক্তির চেয়েও গোলন্দাজের ওপর নির্ভর করেছেন বেশি। কিন্তু তারপরেও তাঁর সৈন্যরা কোনো দ্রুত সাফল্য দেখাতে পারেনি। বিশাল বিশাল গোলার আঘাতে দেয়ালের কোনো কোনো অংশ সাময়িক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো কার্যকর ফাটল তৈরি করতে পারেনি। বরঞ্চ গ্রিক সৈন্যরা দ্রুতই তা মেরামত করে নেয়।
সুলতান মেহমেদ ও সম্রাটের মধ্যে চিঠি বিনিময়
সমুদ্র আক্রমণের ক্ষেত্রেও সুলতানের সৈন্যরা প্রত্যাশিত সাফল্য লাভে ব্যর্থ হয়। গোল্ডেন হর্নের ওপর আগের মতোই গ্রিকদের আধিপত্য বজায় থাকে। এর ওপরে আবার এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে অস্ত্র ও রসদবোঝাই তিনটি জেনোইস বিশাল জাহাজ দার্দেনালিসের ভেতর দিয়ে চালিয়ে শহরের কাছে পৌঁছে যায়। সুলতান তাঁর অ্যাডমিরাল এ জাহাজগুলো ডুবিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেও কাঙ্ক্ষিত ফল আসে না। খ্রিস্টান জাহাজগুলো তুর্কিদের হারিয়ে নিরাপদে গোল্ডেন হর্নের আশ্রয়ে পৌঁছে যায়।
সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ বুঝতে পেরেছিলেন শুধু স্থলপথে আক্রমণ করলেই কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটানো যাবে না। কিন্তু এখন তাঁর সমুদ্রপথের আক্রমণও ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠার জন্য সম্ভবত তাঁরই কোনো ইটালিয়ান সৈন্য সুলতানের মাথায় অভিনব এক পরিকল্পনা ঢুকিয়ে দেয়। জমির ওপর দিয়ে বসফরাস থেকে গোল্ডেন হর্ন পর্যন্ত জাহাজগুলোকে টেনে নেয়া। সুলতানের প্রকৌশলীরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুইশ ফুট উচ্চতায় উপত্যকায় ওপর থেকে শুরু করে ঢালু বেয়ে পোতাশ্রয় পর্যন্ত আরেকটি উপত্যকা পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে। তেল মাখানো কাঠের গুঁড়ি ফেলে ষাঁড়ের সাহায্যে জাহাজগুলোকে টেনে নেয়া হয় ।
এভাবে পাল উঠিয়ে পতাকা টাঙিয়ে বিস্মিত খ্রিস্টান সৈন্য ও পাহারাদারদের চোখের সামনে পাহাড় বেয়ে তাদের পোত্রাশ্রয়ের ওপর নেমে আসে জাহাজের শহর। এভাবে গ্রিক ও প্রতিরক্ষা ব্যুহর মাঝে গোল্ডেন হর্নের ভেতরে সত্তরটি তুর্কি জাহাজ ভাসাতে শুরু করে। জোনাই এবং ভেনেশীয়রা হালকা জলযান দিয়ে আঘাত করতে চেষ্টা করলেও তুর্কিরা আক্রমণ প্রতিহত করে। গ্রিকরা গোল্ডেন হর্নের নিয়ন্ত্রণ হারায়। তুর্কিরা পোতাশ্রয়জুড়ে নৌকা দিয়ে ভাসমান সেতু বানিয়ে নিজেদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করে। এভাবে প্রোতাশ্রয় এবং স্কুল উভয় দিকের দেয়ালের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
কন্সনান্টিনোপোল দেয়ালে সুলতানের সফল আঘাত
এরই মাঝে দেয়ালের পাশে সুলতানের আক্রমণ তিনবার সফল হয়। প্রথমে ছিল অস্থায়ী সৈন্যদল, প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত যুদ্ধ করে তারা প্রাথমিকভাবে শত্রুকে ভয় পাইয়ে দেয়।
এরপর আসে সশস্ত্র এবং সুদক্ষ আনাতোলিয়ার সেনাবাহিনী। গির্জার সংকেত আবারো বেজে উঠার পরপরই এর শব্দ ঢেকে যায় দেয়ালের ওপর সৈন্যদের ঝনঝন শব্দে। আনাতোলিয়ার সৈন্যরা যদিও পাথর বৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু আরবানের তৈরি করা বিশাল কামানের গোলা সরাসরি দেয়ালে আঘাত হানে। সৈন্যরা হইহই করে সেই ফাঁক গলে ঢুকে যায়। কিন্তু সম্রাট স্বয়ং গ্রিকদের নিয়ে এদের প্রতিহত করেন। বেশির ভাগ সৈন্যকে কচুকাটা করে বাকিদেরকে পরিখার কাছে ফিরতে বাধ্য করেন। সুলতান একই সাথে সৈন্যদের প্রশংসা এবং ভর্ৎসনা দুটোই করেন। এরপর সময় আসে যুদ্ধে জানিসারিসদেরকে ব্যবহার করার। যুদ্ধের প্রধান আক্রমণের জন্য এদেরকে সংরক্ষিত রেখে ছিলেন সুলতান। জানিসারিসরা সময় আসতেই সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যায় রণসংগীত গাইতে গাইতে। মাহমুদ চিৎকার করে তাদেরকে উৎসাহিত করতে থাকেন। কিন্তু হাতাহাতি যুদ্ধের এক ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তারা তেমন আগাতে পারেনি। অন্যদিকে খ্রিস্টানরা প্রায় চার ঘণ্টা ধরে একই উদ্যম নিয়ে লড়াই করে চলেছে।
কিন্তু তারপরই দুর্ভাগ্য তাদের থামিয়ে দেয়। প্রথমত বলা যায় পেছন দিকের খিড়কীর দরজার কথা। দেয়ালের উত্তর দিকের এই দরজা দিয়ে এক দল তুর্কি সেনা প্রবেশ করে টাওয়ারে চড়ে বসে। গ্রিকরা হয়তো এটাকে থামাতে পারত যদি না দ্বিতীয় দুর্ভাগ্য তাদের না থামিয়ে দিত। তাদের সেনাপ্রধান জিউসটিয়ানীর বুকের বর্ম ভেদ করে খুব কাছ থেকে ছোড়া গুলি ঢুকে গেলে তিনি মারাত্মক ভাবে আহত হন। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় সাহস হারিয়ে পার্থনা করেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাওয়ার। কিন্তু এ কথায় কান না দিয়ে সম্রাট অনুরোধ করেন তাঁকে ছেড়ে না যেতে। ভেতরের দরজা খুলে জিউসটিয়ানীকে গোল্ডেন হর্নে অবস্থিত জেনোইস জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয়। এ অবস্থায় তার জেনোইস সৈন্যরা যুদ্ধে পরাজয় ঘটেছে ভেবে সেনাপতির সাথে চলে যায় ।
এর ফলে সৈন্যদের মনোভাব ভেঙে যায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খুব দ্রুত এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে সুলতান চিৎকার করে উঠেন, "শহর আমাদের” এবং জানিসারিসদের সর্বশেষ আক্রমণের নির্দেশ দেন। আনাতোলিয়ার দৈত্যাকৃতি সৈন্য হাসান নেতৃত্ব দিয়ে মৃত্যুবরণ করলেও জানিসারিসরা শীঘ্রই গ্রিকদের কচুকাটা করে ফেলে এরপর অনেক জানিসারিস কোনো বাধা ছাড়াই ভেতরের দেয়ালের ওপর চড়ে বসে। একই খিড়কীর দরজাতেও তুর্কি পতাকা উত্তোলন করে তুর্কিদের বিজয় ঘোষিত হয়।
এরই মাঝে সম্রাট খিড়কীর দরজার কাছে যেতে চাইলেও গুজবে শুনতে পান তুর্কিরা পৌঁছে গেছে; কিছুমাত্র জেনোইস আছে প্রতিহত করার জন্য। সম্রাট ঘুরে প্রধান দরজার কাছে যেতে চাইলে দেখতে পান, ইতিমধ্যেই তা তুর্কিদের দখলে চলে গেছে। শহর কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং আমি এখনো বেঁচে আছি, ভেবে সম্রাট ঘোড়া থেকে নেমে রাজকীয় চিহ্ন খুলে ফেলে ছুটে আসা জানিসারিসদের মাথা লক্ষ করে দৌড় দেন। এরপর জীবিত অথবা মৃত আর কখনোই দেখা যায়নি তাঁকে।
সুশৃঙ্খলভাবে দরজা দিয়ে শহরে প্রবেশ করেই বিজয়ী সৈন্যদল বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। শহরজুড়ে নরহত্যা শুরু করে। গির্জা, আশ্রম, প্রাসাদ বাড়িঘর সবকিছু তছনছ করে ফেলতে শুরু করে। গ্রিকরা হাজারে হাজারে দৌড়ে যায় তাদের প্রধান গির্জার দিকে।
ইতিহাসবিদ মাইকেল দুকাস এ সম্পর্কে লিখে গেছেন, বিশাল গির্জা চত্বরে প্রবেশ করেই গ্রিকরা প্রধান দরজা বন্ধ করে দেয়। অপেক্ষা করতে থাকে কোনো স্বর্গদূত এসে তাদের রক্ষা করবে। দিনের প্রথম ঘণ্টাও পার হয়নি। শহর লণ্ডভণ্ড করে তুর্কিরা এসে গির্জায় দরজার কুঠারাঘাত করতে থাকে।
সুলতান বিজয়ীর বেশে শহরে প্রবেশ করে
সুলতান বিজয়ীর বেশে শহরে প্রবেশ করে দিনের শেষ ভাগে । জানিসারিস ও মন্ত্রিপরিষদ পরিবৃত্ত হয়ে শহরের রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে গিয়ে সোজা থামেন প্রধান গির্জার সামনে। ঘোড়া থেকে নেমে এক মুঠো মাটি নিয়ে নিজের মাথায় মাখান। গির্জায় প্রবেশ করে বেদীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান একজন সৈন্য মেঝে থেকে মার্বেল পাথর খুলে নিচ্ছে। সুলতান তৎক্ষণাৎ সৈন্যটিকে তরবারির আঘাত করে জানিয়ে দেন যে সম্পদ এবং বন্দি সৈন্যদের। কিন্তু দালান-কোঠা সুলতানের। সৈন্যটি পায়ের ওপর পড়ে গিয়ে চলে যায়।
মাহমুদ নির্দেশ দেন এ গির্জা মসজিদে রূপান্তর হবে। তৎক্ষণাৎ মুসলিম ধর্ম নেতা উঠে আজান দেয়। এরপর সুলতান নিজে বেদিতে ওঠে আল্লাহকে অভিবাদন জানান এ বিজয়ের জন্য। তারপর যখন তিনি রাস্তায় বেরিয়ে আসেন সব কিছু নিশ্চুপ হয়ে যায়। সুলতান নির্দেশ দেন একদিনের লুণ্ঠনই যথেষ্ট হয়েছে সৈনদের জন্য।
কনস্টান্টিনোপলের পতনের ফলে পশ্চিমা খ্রিস্টান রাজ্যসমূহ নিজেদের বিনাশের কথা ভেবে হতচকিত হয়ে ওঠে। শেষ মুহূর্তে ভেনেশীয়ান জাহাজ বহরের মাধ্যমে পোপের সৈন্যবাহিনী শহর রক্ষার চেষ্টা করলেও আজিয়ানের তীর থেকে আর এগোতে পারেনি।
Labels: Rise of attoman, rise of attoman Netflix, Rise of attoman season 1
0 Comments:
Post a Comment
Subscribe to Post Comments [Atom]
<< Home