Friday, December 2, 2022

উসমানী সাম্রাজ্যের উত্থানঃ সিজন ০১, এপিসোড ১-৩ বাংলা সাবটাইটেল

rise-of-attoman-s1

 খ্রিস্টান শক্তিসমূহ প্রথম দিকে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদকে তেমন একটা আমল দেয়নি। বখে যাওয়া রাজকুমারের পূর্ব ইতিহাস দেখে কেউ ধারণা করেনি যে, তিনি একদিন পিতার মতোই দক্ষ হয়ে উঠবেন। ছোটখাটো কিন্তু শক্তিশালী ও সুদর্শন মাহমুদ ছিলেন ঠাণ্ডা স্বভাবের। নিজের উপস্থিতি দিয়ে চারপাশের শ্রদ্ধা আদায় করে নেওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব ছিল তাঁর জীবন লিখে গেছেন, “তাঁর ঠোঁটে ছিল শান্তির বাণী। কিন্তু হৃদয়ে ছিল যুদ্ধের বাসনা।” বিদেশি দূতদের সাদরে গ্রহণ করে তিনি পিতার সই করা চুক্তিসমূহ পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেন। সম্রাট কনস্টান্টাইনের রাষ্ট্রদূতকে বন্ধুসুলভ আতিথেয়তা প্রদান করেন।

মেহমেদ ২য় এর প্রাথমিক শাসনামল এর বিবরণ 

আবার এশিয়া মাইনরে অনেক রাষ্ট্রদূতই সুলতানের কাছে যথোপযুক্ত সম্মান না পাওয়ার অভিযোগ করেন। প্রধান উজির হালিল এদেরকে সাবধান করে লিখেন, তোমরা যদি অর্থানের (বায়েজীদের পৌত্র) সাথে বাহিনী গঠন করে অগ্রসর হও; নিশ্চিত থাকো যে নিজেদের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করবে।


আড্রিয়ানোপলে ফিরে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ স্টুমা শহর থেকে গ্রিকদেরকে বিড়াতন ও তাদের রাজস্ব বায়েজাপ্তকরণের নির্দেশ দেন । এশিয়া মাইনরে ফিরে এসেই বাইজেন্টাইন অঞ্চলে প্রাসাদ তৈরির আদেশ দেন। এর ফলে প্রণালি পথকে নজরে রাখা এবং কনস্টান্টিনোপলকে অবরোধ করা সহজতর হবে।


কিন্তু বাইজেন্টাইন সম্রাট তৎক্ষণাৎ এ সিদ্ধান্তকে চুক্তির বরখেলাপ ভেবে রাষ্ট্রদূত পাঠান মাহমুদের কাছে। সুলতান রাষ্ট্রদূতকে অস্বীকার করেন। প্রাসাদের নির্মাণকাজ শুরু করার পর সম্রাট দ্বিতীয় আরেকজন রাষ্ট্রদূত পাঠান নানা উপঢৌকনসহকারে এবং বসফরাসে গ্রিক গ্রামগুলোর সুরক্ষার অনুরোধ জানিয়ে। সুলতান আবারো তাদের ফিরিয়ে দেন। সবশেষে শেষ রাষ্ট্রদূত এসে কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করা হবে না মর্মে নিশ্চয়তা চাইতেই সুলতান তাদের হত্যা করেন। এর ফলেই সবার মাঝেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।


সুলতান নিজে পরিকল্পনা করে প্রাসাদের দেয়াল তৈরি করেছেন। মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। বোগাজ কেসেন নামে নামকরণ করা হয় ।


প্রাসাদের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সুলতান সেনাবাহিনী নিয়ে কনস্টান্টিনোপলের দেয়াল পরিদর্শন করেন তিন দিন ধরে। এরপর শীতে আড্রিয়ানোপলে নিজের কোর্টে ফিরে এর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করেন। রাতারাতি তিনটি কামান স্থাপন করেন প্রণালির পাশের একটি উঁচু টাওয়ারে ।



নির্দেশ জারি করেন যে প্রণালি পায় পাপ হওয়ার সময় প্রতিটি জলযান নিজেদের পাল এবং নোঙ্গর নামিয়ে রাখবে। প্রাসাদের সামনে নোঙ্গর নামিয়ে রেখে নিজেদের যাত্রা অব্যাহত করার জন্য অনুমতি জোগাড় করবে নির্দিষ্ট হারে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে। নচেৎ কামানের গোলা মেরে তৎক্ষণাৎ তাদের ডুবিয়ে দেয়া হবে।


মাহমুদ নতুন নতুন সামরিক সরঞ্জামের প্রতি উৎসাহী ছিলেন। হাঙ্গেরিয়ান ইঞ্জিনিয়ার আরবান কামানের মাধ্যমে তাঁকে আরো উৎসাহী করে তোলেন এই বলে যে. এর গোলা বাইজেন্টাইন নয়, ব্যাবিলনের দেয়ালও ফুটো করে দিতে পারবে। এভাবে আরবানকে বোগাজ কেসেনের ওপর স্থাপন করার মতো কামান তৈরির নির্দেশ দেন সুলতান, যাতে বসফরাসকে কামানের গোলার নাগালের মাঝে রাখা যায়


মাহমুদ এরপর আরবানকে নির্দেশ দেন দুইগুণ বড় একটি কামান তৈরি করার জন্য। এটি তৈরি শেষ হওয়ার পর দেখা যায় আড্রিয়ানোপলে সাতশ সৈন্য ও পনেরো জোড়া ষাঁড় প্রয়োজন হয় এটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নেয়ার জন্য। শহরবাসীকে সতর্ক করা হয় এর শব্দে ভয় না পাওয়ার জন্য। তারপর এটি পরীক্ষা করা হয়। দশ মাইল দূর থেকেও এর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় আর গোলাটি এক মাইল ছুটে গিয়ে ছয় ফুট গভীরে গিয়ে থামে শেষ পর্যন্ত ।


এই মহড়ায় উল্লসিত হয়ে সুলতান নির্দেশ দেন রাস্তা ও সেতু মেরামত করার জন্য যেন বসন্তে এই কামান কনস্টান্টিনোপলের দেয়ালের বাইরে কোনো অংশে স্থাপনের জন্য নিয়ে যাওয়া যায়। এভাবে আর্টিলারি বাহিনী গঠন করে গান পাউডার ব্যবহারের প্রচলন করেন সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ, যা পশ্চিমে পরিচিত থাকলেও পূর্বের মানুষের অজানা ছিল।


১৪৫২ সালের পুরো শীতজুড়ে সুলতান কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে পরীক্ষা করতে থাকেন নিজের কৌশল, পরিকল্পনা, আক্রমণের প্রস্তুতি। ছদ্মবেশে শহরে ঘুরে সৈন্যদের ও সাধারণ মানুষের মনোভাব সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।


নিজের সাম্রাজ্যের প্রতিটি প্রদেশ থেকে সৈন্য এনে থ্রেসে জড়ো করেন সুলতান। যাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় শত হাজারে। এদের মাঝে জানিসারিসরাই ছিল বারো হাজার। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সেনাবাহিনীর সরঞ্জামের তদারক করেন। রাজ্যজুড়ে কারিগররা তৈরি করতে থাকে বর্ম বর্ণা, শিরস্ত্রাণ, তরবারি, তীর-ধনুক-প্রকৌশলীরা বানায় ঢাকা ও ব্যাটারি, এই বিশাল বাহিনীর সামনে কনস্টান্টিনোপলের গ্রিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সংখ্যা ছিল মাত্র সাত হাজার।




সম্রাট গিওভান্নি নামে জেনোয়ার বিশেষজ্ঞকে চাকরিতে নিয়োগ দান করেন শহর প্রতিরক্ষার জন্য। অস্ত্রের পুনর্বণ্টন করা হয়। আর্থিক সাহায্যের জন্য ফাও গঠন করা হয়। ব্যক্তি থেকে শুরু করে গির্জা, আশ্রম সব জায়গা থেকেই এতে অর্থ দান শুরু হয়।


সুলতান সচেতন ছিলেন যে কনস্টান্টিনোপলকে অবরোধ করার পূর্বের সব অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কারণ ছিল শুধু স্থলপথে আক্রমণ। বাইজেন্টাইন সব সময় নৌবিদ্যায় পারদর্শী ছিল বিধায় সমুদ্রপথে নিজেদের প্রয়োজনীয় রসদ আনত। অন্যদিকে তুর্কিরা এশিয়া মাইনর থেকে সৈন্য পরিবহনের জন্য খ্রিস্টান জাহাজ ব্যবহার করত। ফলে মাহমুদ বুঝতে পারেন যে নৌশক্তি জড়ো করাও জরুরি। এই চিন্তা থেকেই আজিয়ান জাহাজ ঘাঁটিতে খুব দ্রুত একশত পঁচিশটি নৌযান তৈরি করা হয়।


১৪৫৩ সালের বসন্তে গ্রিকবাসী অবাক হয়ে দেখল তুর্কিদের বিশাল নৌবহর তাদের নিজেদের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। এরপর নিজের মন্ত্রিপরিষদের কাছে আক্রমণের ও যুদ্ধের পরিকল্পনা খুলে বলে সুলতান ঘোষণা করেন যে তুর্কিরা এখন নৌশক্তিতে বলিয়ান এবং কনস্টান্টিনোপল ছাড়া অটোমান সাম্রাজ্য অসম্পূর্ণ মন্ত্রিপরিষদ একবাক্যে সুলতানকে সমর্থন দেয়।


সুলতান নবীজির সমর্থনও পেয়েছিলেন। অটোমান সেনাবাহিনী এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে স্বর্গে যে সৈন্য বিশেষ একটি জায়গা পাবে সে শহরে প্রবেশ করবে। সুলতান প্রায়ই বলতে থাকেন যে তিনিই সেই রাজকুমার হবেন যিনি অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ইসলাম নাম নিয়ে জয়ী হবেন।


অন্যদিকে গ্রিকরা পুরো শীতজুড়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাধার মুখোমুখি হয়।


ভূমিকম্প, বন্যা, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, তারা পতন সবকিছু মিলিয়ে অ-খ্রিস্টানদের হাতে সাম্রাজ্যের পতনের ঘণ্টা বাজতে থাকে।


বসন্তের শুরুতে সুলতান প্রেসের মধ্য দিয়ে নিজের বিশাল বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হতে শুরু করেন এবং ২ এপ্রিল ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপলের দেয়ালের কাছে পৌঁছান। ভূমির পাশের দেয়ালের একটি কেন্দ্রীয় অংশকে বাছাই করে সুলতান নিজের হেডকোয়ার্টার তৈরি করান। চারপাশে জড়ো করেন জানিসারিসদের। পাশেই রাখা হয় সেই দানবীয় কামান। সুলতানের অপর পাশে ঠিক তাঁর সোজাসুজি জেনোইস সৈন্যদের নিয়ে সম্রাট অবস্থান নেন। এছাড়াও ভেনেশীয়ান খ্রিস্টানরাও তাঁর পক্ষে আছেন প্রমাণ করার জন্য সৈন্যরা নিজেদের ইউনিফর্ম পরে তুর্কিদের সামনে দিয়ে হেঁটে বেড়ান। কূটনৈতিক পর্যায়ে সুলতান কোন আগ্রহ না দেখানোয় এটাই যদি ঈশ্বরের


ইচ্ছা হয় তবে তাই হোক মর্মে সুলতানকে একটি পত্রে জানান সম্রাট। এরপর শহরের প্রধান দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিখার ওপর থেকে সেতু সরিয়ে ফেলা হয়। পবিত্র সপ্তাহজুড়ে খ্রিস্টানরা গির্জাতে প্রার্থনা

Labels: , ,

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home